আমাদের আজকের লেখায় আমরা জানবো চুইঝালের ইতিহাস, কেন এতো বিখ্যাত এবং চুইঝাল নিয়ে যত অজানা কথা।
খুলনার চুইঝালের ইতিহাস
মনে করা হয় চুইঝাল সর্বপ্রথম প্রচলন হওয়া শুরু করে বাগেরহাটে। তবে সময়ের সাথে সাথে খুলনার চুইঝাল (Khulnar chuijhal) দেশ এবং বিদেশে সুনাম অর্জন করে। যাইহোক, খুলনা অঞ্চল চুইঝাল মশলা গোটা দেশব্যাপী প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তার সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দেশের সব থেকে উন্নত ও ভালো মানের চুইঝাল শুধু মাত্র খুলনা ও বাগেরহাটে পাওয়া যায়। যে কারণে স্থানীয় সরকার চুইঝালকে উক্ত অঞ্চলের ঐতিহাসিক ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।
এটি দেখতে পুরোপুরি পান গাছের মত তবে এর পাতা, ফুল এবং ফল আলাদা। অন্যান্য কাছের মত চুইঝাল গাছে ফুল ফোটে এবং পরাগায়নের মাধ্যমে ফল হয়। পরবর্তীতে সেই ফল থেকে নতুন চারা গজায়। মূলত একটি চারা চুইঝাল গাছ বিক্রি করার উপযুক্ত হতে কমপক্ষে এক বছর সময় প্রয়োজন হয়।
সাধারণত চুইঝাল এঁটো চুই, গাছ চুই ও ডাল চুই এই তিন ধরনের হয়। তাছাড়া উৎপাদিত এলাকার উপর নির্ভর করে এর গুণগত মান, স্বাদ, গন্ধ ও অন্যান্য বিষয় পরিবর্তিত হয়। মান পরিবর্তনের সাথে সাথে দামেও পরিবর্তন আসে যা একজন সচেতন ক্রেতার সবসময় মনে রাখা উচিত।
খুলনার চুইঝাল কেন বিখ্যাত?
আমরা জানি কোন খাবার সুস্বাদু করার জন্য সব থেকে বেশি কাজ করে এতে ব্যবহার করা মশলা। ভারতীয় উপমহাদেশে মশলার প্রচলন সব থেকে বেশি। যদিও মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় অনেক ধরনের মশলা ব্যবহার করা হয় তবে উপমহাদেশে ঝাল স্বাদের মশলা সব থেকে বেশি প্রচলিত।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চুইঝাল – chuijhal নামক একটি বিশেষ মশলা পরিচিতি পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে গরু ও ছাগলের মাংস রান্না করার সময় দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝাল ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের রংপুর, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে চুইঝাল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয়।
চুইঝাল অল্প সময়ে এত বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি তরকারিতে এক অন্য ধরনের স্বাদ যোগ করে। চুইঝাল যুক্ত তরকারি অনেক গাঢ় এবং রসালো হয় যা খেতে সহনীয় মাত্রায় ঝাল স্বাদ সমৃদ্ধ। অন্যদিকে এই মশলা থেকে সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে যা খাবারের রুচি আরও বৃদ্ধি করে।
এই কারণে ধীরে ধীরে চুইঝাল সমৃদ্ধ রান্নার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, চুইঝাল যুক্ত খাবার অনেক সুন্দর ঘ্রাণ যুক্ত এবং অনেক সুস্বাদু। এই কারণে মাংস ব্যতীত অন্যান্য তরকারি এবং খিচুড়িতে অবাধে এই মশলা ব্যবহার করা হয়। সময়ের সাথে সাথে দক্ষিণবঙ্গের সকল জেলা সহ ঢাকায় এই মশলার কদর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মানুষের মধ্যে এত চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার জন্য কয়েকদিনের ব্যবধানে অনেক হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠে। কিছু কিছু হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট শুধু চুইঝাল দিয়ে রান্না করা গরু, হাস ও ছাগলের মাংসের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা।
তবে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে এই খাবার অনেকের সহজলভ্য নয়, তাই ” শপ কর্ণার বিডি “ সরাসরি প্রতি সপ্তাহে বাগান থেকে তরতাজা চুইঝাল সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশের সকল জায়গায়। (তাদের সাথে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।)
চুইঝালের উপকারিতা
যদিও চুইঝাল একটি মশলা তবে এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে এই উদ্ভিদের শিকড় থেকে শুরু করে বাকি সব জায়গা ভেষজ ক্ষমতা সম্পন্ন। তাছাড়া এই উদ্ভিদে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল থাকে। এই সকল উপাদানের সাথে থাকা অন্যান্য উপাদান ক্যানসার, হৃদ্রোগ, শরীরব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাজমা, অনিদ্রাসহ অসংখ্য রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়া চুইঝাল কফ পরিষ্কার করার পাশাপাশি সর্দি জ্বর ভালো করে। এতে থাকা ঝাঁজ ভাব যে কোন সর্দি এবং কাশীতে বিশেষ উপকার করে। যে কোন ব্যথা দ্রুত কমার সাথে সাথে চুইঝাল টনসিল ও লিভার সমস্যায় টনিক হিসেবে কাজ করে।
এই সকল কিছুর সাথে চুইঝাল খেলে সিজার রোগীরা অনেক উপকার পায় যে কারণে শুধু মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অনেকেই এই মশলা তাদের নিত্যদিনের সকল রান্নার তালিকায় যোগ করছে। এতে একদিকে যেমন সুস্বাদু খাবার রান্না হচ্ছে অন্যদিকে সেই খাবারের পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খুলনার চুইঝাল রেসিপি
চুইঝাল একটি সর্বজনীন মশলা। যদিও বর্তমানে চুইঝাল শুধু মাংসের সাথে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তবে এর নানামুখী ব্যবহার শুরু হয়েছে যা নিচে দেওয়া হলো।
ঝালমুড়ি
চুইঝাল ব্যবহার করে বিভিন্ন মাংস রান্না করার পাশাপাশি এর ভিন্নধর্মী ব্যবহার শুরু হয়েছে। মূলত ১ পিস চুই ঝাল, ১টি আস্ত রসুূন এবং চুই এর মশলার সাথে মুড়ি মিশিয়ে এই ঝালমুড়ি তৈরি করা হয় যা বর্তমানে অনেকের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
ছোলা ভুনা
ভুনা ছোলা খেতে আমরা কে না ভালোবাসি। যদি এর সাথে চুইঝালের মত উৎকৃষ্ট মশলা যোগ করা হয় তবে স্বাদ দ্বিগুণ হয়।
এগুলো ছাড়াও আচার তৈরী সহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ দ্বিগুন করতে নিত্যদিনের সকল মসলার পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে চুইঝাল।
প্রতিটি জেলা ও অঞ্চল ভিত্তিক বিখ্যাত কিছু খাবার, জিনিস কিংবা জায়গা থাকে। যা ঐ জেলার বিখ্যাত বা ফেমাস। যেমন বগুড়া দই মিষ্টির জন্য, গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি, পাবনার ঘি, প্যারা সন্দেস, নওগা জেলার প্যারা সন্দেস, পোড়াবাড়ির চমচম ইত্যাদি। ঠিক তেমনি খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশের সকল জেলার বিখ্যাত খবারের পাশাপাশি।