চুইঝাল আমাদের দেশের খুলনা অঞ্চলের একটি ঐতিহ্য। খুলনার পাশাপাশি সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এই মশলা জাতীয় এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। তবে স্বাদে এবং গুনে খুলনা ও বাগেরহাটের চুইঝাল সব থেকে বেশি সুস্বাদু ও উন্নতমানের। এই কারণে দেশে এবং বিদেশে এই মশলার সুনাম ছড়িয়ে পরেছে।
চুইঝাল কি?
চুইঝালের বৈজ্ঞানিক নাম হলো “Piper chaba” যা একধরনের বিশেষ মশলা যেটি বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জন্মায়। খুলনা অঞ্চলে চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় বা লতাকে ছোট ছোট টুকরো করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে।
সাধারণত চুইঝাল এঁটো চুই, গাছ চুই ও ডাল চুই এই তিন ধরনের হয়। তাছাড়া উৎপাদিত এলাকার উপর নির্ভর করে এর গুণগত মান, স্বাদ, গন্ধ ও অন্যান্য বিষয় পরিবর্তিত হয়। মান পরিবর্তনের সাথে সাথে দামেও পরিবর্তন আসে যা একজন সচেতন ক্রেতার সবসময় মনে রাখা উচিত।
চুইঝাল যুক্ত তরকারি অনেক গাঢ় এবং রসালো হয় যা খেতে সহনীয় মাত্রায় ঝাল স্বাদ সমৃদ্ধ। অন্যদিকে এই মশলা থেকে সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে যা খাবারের রুচি আরও বৃদ্ধি করে। এই কারণে মাংস ব্যতীত অন্যান্য তরকারি এবং খিচুড়িতে অবাধে এই মশলা ব্যবহার করা হয়। চুইঝাল দিয়ে মাংস রান্না ব্যাপক পরিমাণে জনপ্রিয় হলেও চুইঝাল দিয়ে মাছ কিংবা অন্যান্য তরকারি রান্না এবং বিভিন্ন ধরনের ভর্তা বা আচার তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো চুইঝাল দিয়ে মাংস রান্না করার একটি সিক্রেট রেসিপি।
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে একটি পাত্রে খাসি বা গরুর মাংসের বড় বড় টুকরো এবং চুইঝালের কাণ্ড ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তারপর মাংসের টুকরোগুলোর মধ্যে একে একে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা মরিচ, গরম মসলা, গোল মরিচ, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া ও পরিমাণমতো লবণ ও তেল দিয়ে মাংসকে মসলার সাথে খুব ভালো ভাবে মাখাতে হবে, কারণ ভালোভাবে মাখানোর ফলে মশলার স্বাদ এবং গন্ধ মাংসের সাথে মিশে যায়।
ভালোভাবে মাখানো হলে মাংসের মধ্যে পরিমিত পরিমাণ পানি এবং দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রি দিয়ে পাত্রটিকে চুলোয় বসাতে হবে। এরপর যতক্ষণ না পানি শুকিয়ে তেল মাংসের উপরে উঠে আসছে ততক্ষণ পুরো আচেঁ মাংস রান্না করতে হবে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে মাংস নেড়ে দিতে হবে যাতে করে সবগুলো মাংসে মসলার স্বাদ প্রবেশ করে এবং মোটামুটি সমান তাপমাত্রায় রান্না হয়। তেল মাংসের উপরে উঠে আসলে রসুন আর চুই ঝাল দিয়ে দিতে হবে। এবার মাংস যাতে লেগে না যায় সেজন্য অনবরত উপর নিচে নাড়তে হবে। যতক্ষন না রসুন গুলো সিদ্ধ হবে ততক্ষন পর্যন্ত মাংসকে উত্তমরূপে কষাতে হবে। রান্নার শেষ পর্যায়ে মাংসের রং বাদামী হয়ে আসবে। এরপর ভাজা জিরার গুড়ো , রাধুনি গুড়ো এবং গরম মসলা দিয়ে নাড়া চাড়া করে কষিয়ে রান্না করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চুইঝালের মাংস।
পরিবেশন
কড়া সুঘ্রাণ আর ঝাঝালো-হালকা টক স্বাদের চুইঝালের মাংসকে রুটি, পরোটা, নান রুটি, কিংবা ভাত, পোলাও, খিচুড়ির সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করা যায়।